৪৬০০ মেগাওয়াটের প্রশ্ন / Turning Off the Switch

ডিভিসি এবং পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের সম্পর্ক সম্প্রতি জটিল পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়েছে। আমাদের রাজ্যে বিভিন্ন থার্মাল, হাইড্রো, এবং সোলার প্ল্যান্টের মাধ্যমে প্রায় ৪৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। ডিভিসি-র অধীনে ঝাড়খণ্ডে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম, প্রায় ২০৯৫ মেগাওয়াট। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ ডিভিসি-র বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজ করে।

এই প্রেক্ষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে—রাজ্য সরকার যদি ডিভিসির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে এর ফলাফল কী হবে? রাজ্যের প্রায় ১০ কোটি মানুষের বিদ্যুৎ চাহিদা কীভাবে পূরণ হবে? এই ধরনের সিদ্ধান্ত আবেগের উপর নয়, বরং বাস্তবতা ও তথ্যের ভিত্তিতে নেওয়া উচিত। আমাদের প্রশাসনের উচিত এই ইস্যুতে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা এবং জনগণের স্বার্থে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ একটি সংবেদনশীল ইস্যু যা রাজ্যের অর্থনীতি এবং শিল্প ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই এ ধরনের সমস্যার সমাধান আবেগের পরিবর্তে বাস্তবমুখী ও দূরদর্শী নীতির উপর নির্ভরশীল হওয়া প্রয়োজন।

এই প্রসঙ্গে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ডিভিসির জল নিষ্কাশন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের অভিযোগ, যা “ম্যান-মেড বন্যা” নামে প্রায় দেড় দশক ধরে পরিচিত। রাজ্যের প্রশাসন দাবি করে যে, ডিভিসির জল নিষ্কাশনের অব্যবস্থাপনা প্রায়ই নিচু এলাকাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করে। এই অভিযোগ বেশ কয়েক বছর ধরে উচ্চারিত হলেও, এখন পর্যন্ত কোনো সুপ্রিম কোর্টে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ডিভিসি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে যে তারা তাদের নিয়ম অনুযায়ী জল নিষ্কাশন করে। এখানে প্রশ্ন উঠে আসে, যদি এটি একটি বাস্তব সমস্যা হয়, তবে কেন এখনো পর্যন্ত আইনি পথে এর সমাধান খোঁজা হয়নি? এর সমাধান খোঁজার জন্য রাজ্য এবং ডিভিসি উভয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

“ম্যান-মেড বন্যা” প্রসঙ্গে আরও গভীর অনুসন্ধান এবং তথ্যভিত্তিক আলোচনা প্রয়োজন। যদি এটি প্রকৃতপক্ষে সত্য হয়ে থাকে, তবে সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খোঁজা উচিত ছিল। তবে, শুধু রাজনৈতিক বিতর্ক হিসেবে এই বিষয়টি উত্থাপন করা হলে জনগণের আস্থার অভাব তৈরি হতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে, ডিভিসির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কোনোরকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজ্য প্রশাসনের উচিত জনগণ এবং শিল্পক্ষেত্রের স্বার্থে যুক্তিসঙ্গত ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেওয়া। বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতি সৃষ্টি হলে তা জনজীবনে বিশৃঙ্খলা আনবে এবং রাজ্যের শিল্পখাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সুতরাং, বাস্তবিক ও তথ্যনির্ভর সমাধানের মাধ্যমে ডিভিসি এবং পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি। আবেগময় বা তাড়াহুড়োর সিদ্ধান্ত এ ক্ষেত্রে কোনো সমাধান নয়। ভবিষ্যতের জন্য দায়িত্বশীল ও সমন্বিত নীতি গ্রহণ করে বিদ্যুৎ সরবরাহের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা আমাদের প্রশাসনের প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত।

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস