দায়িত্ববোধ বনাম স্বার্থপরতা? / A Call for Accountability

সম্প্রতি, পশ্চিমবঙ্গে তিলোত্তমার সুবিচারের দাবীতে আন্দোলন নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং বর্তমান বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দা ডাক্তারদের আন্দোলনকে “স্বার্থপর” হিসেবে অভিহিত করেছেন, যখন বিজেপির আরেক নেতা দিলীপ ঘোষ এটিকে “নাটক” বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী তো জুনিয়র ডাক্তারদের গাঁজাখোর নেশা-ভাঙ করে বলে তোপও দেগেছেন।তাঁদের এইসব মন্তব্য রাজ্যজুড়ে নানা মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এই ধরনের বক্তব্য কি বঙ্গ শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনের গুরুত্বকে খাটো করার চেষ্টা, নাকি আন্দোলনকারীদের অবস্থান নিয়ে যথাযথ মূল্যায়ন?

পশ্চিমবঙ্গের ডাক্তাররা বেশ কয়েক বছর ধরে কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন—নিরাপত্তার অভাব, রোগীর আত্মীয়দের দ্বারা শারীরিক হেনস্থা, এবং প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাবের মতো জটিল সমস্যা তাঁদের কাজকে কঠিন করে তুলেছে। আর জি করের সাম্প্রতিক ঘটনায়, ডা. তিলোত্তমার ধর্ষণ ও হত্যার মর্মান্তিক ঘটনা ডাক্তারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এবং এই ঘটনার সুবিচারের দাবিতে সাধারন মানুষ এবং ডাক্তারদের আন্দোলন শুরু হয়েছে।

তিলোত্তমার সুবিচারের দাবীতে এই আন্দোলন প্রথম থেকেই বাম ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলোর সক্রিয় সমর্থন পেয়েছে। এসএফআই, ডিওয়াইএফআই এবং মহিলা সমিতির মতো সংগঠনগুলো রাজপথে নেমে ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের দাবি ছিল শুধু ডাক্তারদের নিরাপত্তার জন্য নয়, তিলোত্তমা হত্যার সুবিচার নিশ্চিত করার জন্যও। ঘটনার প্রথম দিন, ডিওয়াইএফআই নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জী সহ একাধিক ছাত্র-যুব নেতারা তিলোত্তমার মরদেহের গাড়ি আটকে, সরকারকে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছিলেন। সাথে যোগ দিয়েছিলেন, লক্ষ লক্ষ সাধারন মানুষ।

এদিকে, আন্দোলনের সাথে যুক্ত একজন বামপন্থী ছাত্র নেতা কলতান দাশগুপ্ত, যিনি তিলোত্তমার সুবিচারের দাবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন, তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ মানুষও দিনের পর দিন এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে আন্দোলনের বিস্তার বাড়িয়েছে।

বিজেপি নেতাদের বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। তাঁদের দাবি, ডাক্তারদের এই আন্দোলন জনস্বার্থের চেয়ে স্বার্থপরতার পরিচায়ক। কেন? জুনিয়র ডাক্তারেরা আন্দোলন স্থল থেকে বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে ‘গো ব্যাক’ বলেছিলেন বলে? তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাঁদের মূল লক্ষ্য জনস্বার্থ রক্ষা, বিশেষ করে ডাক্তারদের নিরাপত্তা এবং রোগীদের সুষ্ঠু চিকিৎসা পরিবেশ নিশ্চিত করা, কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলকে ফায়দা তুলিয়ে দেওয়া নয়। তিলোত্তমা ঘটনার সুবিচার পাওয়াও তাঁদের অন্যতম প্রধান দাবি।

এই প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে—এই আন্দোলন কি শুধু ডাক্তারদের স্বার্থের জন্য, নাকি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচারের দাবির জন্যও? একদিকে, ডাক্তাররা তাঁদের কর্মপরিবেশের উন্নতি এবং নিরাপত্তার জন্য আন্দোলন করছেন, যা দীর্ঘমেয়াদে রোগীদেরও উপকারে আসবে। অন্যদিকে, কিছু রাজনৈতিক নেতা এটিকে একতরফা স্বার্থপরতা হিসেবে দেখছেন। সব সময় ভোটের ক্যালকুলেটার নিয়ে হাজির কি তাদের থাকতেই হবে? এই সব বলে, বিজেপি নেতারাই তো মানুষের আন্দোলনকে লঘু করে পরোক্ষ ভাবে তৃনমূল সরকারের সুবিধা করতে চাইছেন, কেন? কোন দীর্ঘমেয়াদী ফায়দার জন্যে?

সাধারন মানুষ ও ডাক্তারদের আর জি কর আন্দোলনে অন্তত রাজ্য সরকারের পোষা এক ওসিকে জেলে ঢুকিয়েছে আর একজনকে নগরপাল পদ থেকে অপসারণ করিয়েছে। কেন্দ্রে সরকার এবং সাথে বঙ্গে ৭০ বিধায়ক আর ১২ সাংসদ নিয়ে, তারা করেছে কি?একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থান আন্দোলন নিয়ে যদি রাজ্যের ক্ষমতাধর বিরোধী দল বিজেপি যদি একের পর এক এইরকম প্রতিক্রিয়া দিতে থাকেন, তবে বিরোধী দলের সাস’পিসি’য়াস একটিভিটি নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই।

কারণ, দিল্লির স্বঘোষিত চৌকিদার, তৃণমুলের পোষা গরুচোর, রেশনচোরগুলোকে লাইন দিয়ে ছেড়ে চলেছে !

কাজেই .. মানুষের আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে এলে, গো ব্যাক শোনাটাই স্বাভাবিক।

সবশেষে, আন্দোলনের সার্বিক মূল্যায়ন করতে গেলে উভয় পক্ষের বক্তব্য বিবেচনা করতে হবে। ডাক্তারদের দাবিগুলি বাস্তব এবং যুক্তিসঙ্গত হলেও, আন্দোলনের ফলে সাধারণ মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে বিষয়েও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন, জুনিয়র ডাক্তারেরা সেই তাড়নাতেই কাজে ফিরেছেন। একইভাবে, বিজেপি নেতাদেরও দায়িত্বশীলভাবে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করা উচিত, যাতে আন্দোলনের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে বিকৃত না করা হয়।

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস