এরপর কি দেবোত্তর? / Devottar: The Next Casualty?

ধর্মীয় সম্পত্তি—ওয়াকফ ও দেবোত্তর—হাজার বছরের ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্বের প্রতীক, আর আজ তা হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক লুটপাটের কেন্দ্র। ওয়াকফ সম্পত্তির নজরদারি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যম হঠাৎ করেই বেশ কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে, কিন্তু দেবোত্তর নিয়ে তাদের নীরবতা কেন? কেন ওয়াকফ নিয়ে এত দুশ্চিন্তা, আর দেবোত্তর নিয়ে একদম নির্বিকার? দেবোত্তরের নামে যদি ধর্মীয় স্থাপনাগুলি দিনে দিনে লোপ পায়, তাহলে কেন্দ্র কি শুধু তাকিয়ে থাকবে?

কেন এই দ্বিমুখী আচরণ? ওয়াকফ সম্পত্তির শুদ্ধি অভিযান যদি এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে দেবোত্তর কি অপ্রাসঙ্গিক? নাকি এখানে মূল উদ্দেশ্য একটিমাত্র সম্প্রদায়কে কোণঠাসা করা? সরকারের উচিত জনগণের প্রশ্নের জবাব দেওয়া: “স্বচ্ছতার অজুহাতে” কেন শুধু ওয়াকফকেই টার্গেট করা হচ্ছে?

এখানেই প্রশ্ন ওঠে রাজ্য সরকারগুলির ভূমিকা নিয়েও। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে, যেখানে দেবোত্তর সম্পত্তির পরিমাণ ব্যাপক। দেবোত্তর জমি বছরের পর বছর ধরে দখল হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু রাজ্য সরকার কি করছে? পুকুর ভরাট হচ্ছে, মন্দিরের জমি বেচা হচ্ছে, কিন্তু রাজ্য সরকার তার প্রতিকার করছে? নাকি চোখ বন্ধ করে থাকলেই সমস্যাগুলো উধাও হয়ে যাবে? দেবোত্তর সম্পত্তির কোনও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই, বোর্ড নেই, অথচ দখলদারি রমরমিয়ে চলছে। দেবোত্তর সম্পত্তি ও ওয়াকফ সম্পত্তি শাসকের কল্যাণে অনায়াসে হাতিয়ে নিয়ে কোথাও গড়ে ঊঠছে আবাসন, কোথাও শপিং কমপ্লেক্স।

খাতায় কলমে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বারবার অভিযোগ করেন, বাংলায় তাঁদের ঠেকাতে শাসক দল দাঁত-নখ বের করে রেখেছে। সভা-সমিতি করতে দেয় না, হেলিকপ্টার নামতে দেয় না—সে কত অভিযোগ! সেই বাংলাতেই ওয়াকফ সম্পত্তির জায়গায় বিজেপির পার্টি অফিসের প্ল্যান ‘তৎকালে’ পাশ করে দিয়েছিলেন জলপাইগুড়ি পুরসভার তৃণমূলের চেয়ারম্যান! তাও আবার মেয়াদ ফুরোনোর দিন। এটাই রাজনীতির বর্তমান খেলা।

রাজনীতির এই খেলা কোথায় গিয়ে ঠেকবে? ওয়াকফ আর দেবোত্তর উভয়ই কি ক্ষমতার রসদ? কেন্দ্রীয় সরকার যদি সত্যিই স্বচ্ছতা চায়, তাহলে দেবোত্তরের প্রতি তাদের এত উদাসীনতা কেন? দেবোত্তরও কি ওয়াকফের মতোই “পরীক্ষার” মুখোমুখি হবে, নাকি তার ভবিষ্যৎ রাজনীতির টানাপোড়েনেই নিঃশেষ হয়ে যাবে?

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “যখনই কোন ব্যক্তি উঠিয়া বলে, আমার ধর্মই সত্য ধর্ম, আমার অবতারই একমাত্র সত্য অবতার, সে ব্যক্তির কথা কখনই ঠিক নহে, সে ধর্মের ‘ক’ পর্যন্ত জানে না।”

এটা সময়ের দাবি যে, কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয় সরকারই এই ধরনের আইওয়াশ বন্ধ করে যেকোনো ধর্মীয় সম্পদ রক্ষা করতে প্রকৃত পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। নয়তো বিচ্ছিন্নতাবাদের আগুনে নতুন করে আবার ঘি পড়বে, আর তার জবাব কে দেবে? লর্ড কার্জন?

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস