১০৫ নট আউট / Global Hunger Index 2024

২০২৪ গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সের (GHI) তালিকা প্রকাশের সাথে সাথেই দেখা যাচ্ছে, সেই তালিকায় ভারতের অবস্থান ১০৫। ১২৭টি দেশের মধ্যে এই স্থান নিশ্চয়ই আমাদের দেশের জন্য লজ্জাজনক। “গুরুতর” ক্ষুধার শ্রেণীতে পড়ে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তার এই ছবি এক কথায় ভয়াবহ। এই অবস্থায় দেশের সাধারণ মানুষ যখন ক্ষুধার্ত, তখন সরকার “সব চাঙ্গাসি” বলতেই ব্যস্ত। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

সরকারের নানান উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও জনকল্যাণমূলক উদ্যোগের কথা শোনা যায়। কিন্তু এগুলোর আসল উদ্দেশ্য কি? যখন দেশের ১৩.৭ শতাংশ মানুষ পুষ্টিহীন, পাঁচ বছরের নিচে ৩৫.৫ শতাংশ শিশু খর্বকায়, তখন সরকারের উন্নয়ন কাহিনী কেমন পাঁকে যাচ্ছে, সেটিই বড় প্রশ্ন। ভারতের এই অবস্থান প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অত্যন্ত হতাশাজনক, যেখানে চিন ২২টি দেশের সাথে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি) যুগ্ম ভাবে প্রথম, এছাড়াও শ্রীলঙ্কা (৫৬), নেপাল (৬৮), মায়ানমার (৭৪) এবং বাংলাদেশ (৮৪) এগিয়ে রয়েছে আমাদের দেশের থেকে। সরকারের উদাসীনতা আমাদের এই পতনের জন্য মূল দায়ী নয় কি? আমাদের দেশের চেয়ে একমাত্র পিছিয়ে রয়েছে পাকিস্তান (১০৯)।

এই অবস্থায় প্রথমসারির মিডিয়ার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। গণমাধ্যমের উদ্দেশ্য জনগণের কথা বলা, কিন্তু এখন তারা সরকার এবং ক্ষমতাধরদের সহযোগী। দৈনিক খবরের শিরোনামগুলি হয়ে উঠেছে সরকারের পক্ষে প্রচারের হাতিয়ার। দরিদ্র মানুষের কথা, তাই আজ সেন্সর করা হয়েছে।

গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভ—লেজিস্ল্যাচার, এক্সিকিউটিভ, জুডিশিয়ারি এবং মিডিয়া—যদি একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধ না হয়, তাহলে জনগণের মৌলিক অধিকার ও ন্যায্যতা সুরক্ষিত হতে পারে না। বর্তমানে গণমাধ্যম সরকারের কৌশলগত সহযোগী হিসেবে কাজ করছে, যেখানে দেশের সাধারণ মানুষ কি ভোগান্তির মধ্যে পড়ছে, তা দেখার প্রয়োজন বোধ করছে না তাঁরা।

জনসাধারণের সমস্যাগুলোকে রাজনৈতিক ফায়দা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, আর জনগণ ক্ষুধা, দরিদ্রতা ও অক্ষমতার মাঝে দিন কাটাচ্ছে। যখন নেতারা হাত তুলে করে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছুঁড়ছেন, তখন আমাদের শিশুদের পুষ্টিহীনতা দিনে দিনে বেড়ে চলছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা যখন জাতির উন্নতির কথা বলেন, তখন তাদের শ্রবণযোগ্য হওয়া উচিত জনগণের কষ্ট। কিন্তু তা হয় না বহু ক্ষেত্রেই।

সরকার যদি সত্যিই জনগণের কল্যাণ চাইত, তবে খোঁজ নিত দেশের প্রতিটি কোণায়—কেন আজ আমাদের এই অবস্থা? খুঁজে বের করত এর কারণ এবং সংশোধনের উপায়। কিন্তু হায়। দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের এই চিত্রের পরিবর্তন ঘটানো প্রয়োজন। এখনই সময় সরকারের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং গণমাধ্যমের ইতিবাচক দায়িত্বশীলতা দাবি করার। সাধারন মানুষের একত্রিত হওয়া প্রয়োজন এখন, অন্তত পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর অধিকার ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য, অন্যথায় ১০৫ নম্বরে থাকা ভারতবর্ষ তাঁদের নাগরিকদের জন্য জন্য একটি লজ্জার ইতিহাস রচনা করতেই পারে। অবশ্য যদি মানে।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস