বীরত্ব ও ‘যুদ্ধবাজ’ মানুষ / Is Humanity Truly Warlike?

মানব সভ্যতার ইতিহাস জুড়েই সংঘর্ষের ছাপ স্পষ্ট। সমাজের আদিকাল থেকে মানুষ একে অপরের বিরুদ্ধে বারে বারে অস্ত্র তুলে নিতে দ্বিধা করেনি। বস্তুত, মানবজাতির একটি বড় অংশই যুদ্ধকে বীরত্বের প্রকাশ হিসেবে মান্যতা দিয়ে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধের যোগসূত্র এতটাই শক্তিশালী যে, একজন যোদ্ধার মর্যাদা প্রায় সবসময়ই একটি প্রশংসনীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয়েছে।
মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশে যুদ্ধ একটি স্বাভাবিক এবং কখনও কখনও অনিবার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এর পেছনে লোভ, ক্ষমতার লড়াই, রাজনৈতিক মতাদর্শের সংঘাত, ধর্মীয় মতভেদ এবং বহু বিষয় কাজ করেছে। যুদ্ধ শুধুমাত্র এক জাতির বিরুদ্ধে আরেক জাতির সংঘাত নয়, বরং নিজ জাতির মধ্যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতাও এর অন্তর্গত। এই ক্ষমতার লড়াইয়ে একজন মানুষের মূল্যায়ন অনেক সময় তার মনুষত্বে নয়, বরং যুদ্ধে তার সাহসিকতা এবং বীরত্বের ওপর করা হয়।
যুদ্ধবাজ মানসিকতা গড়ে ওঠার পেছনে মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর প্রভাব রয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী, ক্ষমতাসীন নেতারা বা রাজন্যবর্গ প্রায়শই যুদ্ধকে ক্ষমতা কায়েম রাখার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যুদ্ধবীরদের বন্দনা এবং তাদের বীরত্বের কাহিনী মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে যুদ্ধে নামতে, সেসবের পেছনে মানসিকতা গড়ে উঠেছে যে, বীরত্বের সত্যিকার মাপকাঠি হলো যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করা।
কিন্তু যুদ্ধে প্রকৃত বিজয় কি কেবলমাত্র ভূমি দখল, ক্ষমতার বিস্তার, বা প্রতিপক্ষকে পরাজিত করা? যুদ্ধের আসল ফলাফল যে শুধু ধ্বংস আর ক্ষতি, তা কি কখনো যুদ্ধবাজ মনোভাবকে থামাতে পারে? ইতিহাস বলে দেয়, পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় যুদ্ধের পরেও মানুষ বেঁচে থেকেছে কেবল সেই দিনগুলির শেষ হওয়ার অপেক্ষায়, যেখানে মানুষ আর মানুষকে শত্রু হিসেবে দেখবে না।
সত্যিকার বীরত্ব আসলে কী, তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকবে। কিন্তু যদি মনুষত্বে বীরত্বের সংজ্ঞা খোঁজা হতো, তাহলে হয়তো মানুষের ইতিহাসটা হতো অনেক অনেক কম রক্তাক্ত।
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
Comments are closed.