মহালয়ায় ছাত্রতর্পণ / Crushed Dreams, Crumbling Roads

মহালয়ার দিন সকালে, যখন গোটা শহর পিতৃতর্পনে ব্যাস্ত, তখন বাশদ্রোণী থানা এলাকার ১১৩ নং ওয়ার্ডে ঘটে গেল একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বেহাল রাস্তায় এক পেলোডারে পিষে মৃত্যু হল নবম শ্রেণীর ছাত্র, সৌম্য শীলের। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ছাত্রটির মাথার পিছনের অংশ ভয়াবহভাবে থেঁতলে গিয়েছিল, রক্ত ফিনকি দিয়ে বেরোচ্ছিল। সেই মুহূর্তের বিভীষিকা এখনও সেখানকার মানুষের স্মৃতিতে তাজা।

কিন্তু যা আরও ভয়াবহ, তা হল প্রশাসনের উদাসীনতা। দুর্ঘটনার পরে এলাকাবাসীরা বারবার বাশদ্রোণী থানায় ফোন করেও পুলিশের দেখা পাননি। পৌরমাতা অনিতা কর মজুমদার, যিনি এই এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধি, তিনিও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে ব্যর্থ হন। শহরের নানা অংশে নানা আছিলায় শাসক নেতাদের উপস্থিতি আমরা অহরহ দেখি, অথচ যখন সাধারণ মানুষের জীবন ও মৃত্যুর প্রশ্ন, তখন তারা কোথায়? নাকি নিহত ছাত্র রিক্সাওয়ালার ছেলে বলে এই উদাসীনতা? শহরে বেহাল রাস্তার বলি এই প্রথম নয়, অহরহ ঘটে এবং অহরহ তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়। বছর দুই আগে এই রকমই বেহাল রাস্তার বলি হয়েছিলেন ৭৯ নম্বর ওয়ার্ডের শাসক কাউন্সিলর পুত্র। তাতেও চোখ ফোটেনি শাসকের। প্রশাসনের এই উদাসীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তা ক্রমশ মানুষের হতাশা বাড়াচ্ছে।

এই ঘটনায় বাশদ্রোণী থানার দায়িত্বহীনতার প্রমাণ আরও প্রকট হল, যখন পাটুলি থানার ওসি তীর্থঙ্কর দে নিজে অন্য থানার এলাকার ঘটনায় উপস্থিত হলেন। প্রশ্ন উঠছে, তাঁর উপস্থিতি কি কোনও উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তার নির্দেশে? নাকি এর পেছনে রয়েছে আরও গভীর কোনও রহস্য? এটি একটি অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ ছিল, বিশেষত যখন নিজের থানার এলাকার বাইরে গিয়ে অন্যত্র দায়িত্ব পালন করা পুলিশের নিয়মের পরিপন্থী। মনোজ ভর্মা জবাব দেবেন কি? নাকি পূর্বসুরি বিনীত গোয়েলের পথ অনুসরণ করবেন?

এই পাটুলি থানার ওসি আগেও বেশ কিছু বিতর্কিত রাজনৈতিক মন্তব্য করেছিলেন সামাজিক মাধ্যমে, যার জন্য এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জনগণের ন্যায়বিচারের দাবি নিয়ে যখন তাদেরই রাস্তায় নামতে হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে: সরকার জনগণের প্রতি কতটা দায়বদ্ধ? সাধারণ মানুষের করের টাকায় পরিচালিত প্রশাসন কি শুধুমাত্র নিজেদের খেয়ালখুশি পালনের জন্য? জীবনরক্ষার দায়িত্ব কি শুধুমাত্র মানুষের?

কিন্তু আসল প্রশ্ন হল, কেন আজও শহরের রাস্তাঘাট এত খারাপ? সাধারণ মানুষের বেসিক চাহিদাগুলোর কথা কি একেবারেই অগ্রাহ্যযোগ্য শাসকের কাছে? কত মৃত্যু হলে তবে সরকারের টনক নড়বে? মানুষকে কেন বারবার বেসিক চাহিদা পূরণের দাবিতে বারে বারে রাস্তায় নামতে হবে?

এই ধরনের ঘটনাগুলি শুধুমাত্র প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে নয়, পুরো শাসনব্যবস্থার অমানবিকতাকেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। জানি না, আর কতদিন এই যন্ত্রণা অপেক্ষা করে আছে বঙ্গবাসীর জন্যে।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস