অহিংসা পরমো ধর্মঃ তথাহিংসা পরো দমঃ / Gandhi’s Legacy Forgotten

গতকাল, ১লা অক্টোবর, টালিগঞ্জের হরিদেবপুর করুণাময়ীতে ঘটে গেল এক অভিনব ঘটনা, যা এলাকার মানুষের জন্য সহিংসতার এক নয়া নিদর্শন তৈরি করল। তিলোত্তমার সুবিচারের দাবীতে জড়ো হওয়া প্রতিবাদী কিছু মহিলার উপর শাসকদলের একদল রাজনৈতিক কর্মীর আক্রমণ যেন এক প্রকার অলিম্পিক্সের ‘অ্যাথলেটিক্স ইভেন্ট’। বঙ্গ শাসকের এই লুম্পেন বাহিনী চশমা খুলিয়ে ভেঙে ফেলার মতো দক্ষতা দেখিয়েছে, মোবাইল ফোন আছাড় মেরে দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিয়েছে, এবং পোল ভল্ট দিয়ে মহিলাদের মুখে লাথি মেরে এক নতুন খেলার সূচনা করেছে। পথচারীরা যাঁরা এই পরিস্থিতি সামলাতে এগিয়ে এসেছিলেন, তাঁরাও ছাড় পেলেন না, রক্তাক্ত হয়ে বাড়ি ফিরলেন— যেন অলিম্পিক্সের ‘মেমেন্টো’ নিয়ে।

আহত মহিলারা যখন থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেন, তখন তাঁদের বলা হল, “ওটা সিভিকদের দায়িত্ব, ওরাই দেখবে।” পুলিশে অভিযোগ করার প্রচলিত প্রক্রিয়াও যেন এখন রাজনীতির প্রভাবের কাছে ধোঁয়াসা। অভিযোগ পুরো ঘটনাটির নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর রত্না শুর। একসময়ের ক্রীড়া সাংবাদিক এখন রাজনীতির মাঠে নেমে ‘খেলা’ পরিচালনা করছেন। এলাকাবাসীর মতে, রত্না শুর তাঁর রাজনীতিকে একেবারে প্রফেশনাল পদ্ধতিতে নিচ্ছেন এবং তা যে তিনি নিখুঁতভাবে করছেন, তার প্রমাণ মিলেছে এই সহিংস ঘটনার মাধ্যমে। মুখ্যমন্ত্রীর র আস্থাভাজন বলে পরিচিত এই নেত্রী নাকি গতকাল আক্ষরিক অর্থে দাঁড়িয়ে থেকে ‘শট’ মেরে প্রতিবাদীদের অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। এ যেন ‘খেলা হবে’ স্লোগানের সরাসরি বাস্তবায়ন।

আর আজ ২রা অক্টোবর, মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন— যিনি বিশ্বজুড়ে অহিংসার প্রতীক হিসেবে পরিচিত। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ এই নেতা সারা জীবন অহিংসার মাধ্যমে প্রতিরোধের শক্তি দেখিয়েছিলেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী, যাঁর রাজনৈতিক পথের শুরু কংগ্রেস দলের মাধ্যমে, যারা মহাত্মা গান্ধীর আদর্শকে বুকে ধরে রাখে বলে আজও দাবি করে, সেই নেত্রীর দল আজ সহিংসতার নতুন মাত্রা ছুঁয়েছে। অহিংসার আদর্শ যাঁর ভিত্তি, সেই গান্ধীজির জন্মদিনেই তৃণমূলের ‘খেলা হবে’ স্লোগান যেন সহিংসতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

কংগ্রেস থেকে উঠে এসে কালীঘাটের সেই মেয়েটি যখন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী হন, তখন তিনি ‘মাটি ও মানুষের’ রাজনীতি করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, তাঁর দলের পক্ষ থেকে যে ধরনের দূর্নীতি, সহিংসতা ও হুমকির রাজনীতি চলছে, তাতে সেই মহান নেত্রীর আদর্শ কতটা বেঁচে আছে, সেটাই প্রশ্নের বিষয়। গতকালের হরিদেবপুরের ঘটনাকে কি আমরা অহিংসা বলতে পারি? নাকি গান্ধীজির শিক্ষা থেকে বহু দূরে সরে যাওয়া এক সহিংসতার উদাহরণ?

আজকের দিনে এই প্রশ্নটি আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে, যখন রাজনীতির আড়ালে ‘খেলা হবে’র নামে সহিংসতা এক নতুন ভাষায় রূপ নিয়েছে। একে দিনের পর দিন সহ্য করবেন না ছুঁড়ে ফেলবেন, তা ঠিক করতে হবে আপনাদেরই।

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস