‘আন্দোলন-লগ্ন’ভ্রষ্টা / From Streets to Scissors

কিছুদিন আগেও বঙ্গ রাজনীতির দিশাহীন ম্রিয়মান বিরোধীদলগুলোর জরাজীর্ণ দশা দেখে পাড়ার অলিতে গলিতে চায়ের আড্ডায় আফসোস শোনা যেত, বলা হতো “উনি বিরোধী হলে এতদিনে আগুন জ্বলত।” কিন্তু আর জি কর কান্ডে বিরোধীরা আন্দোলনের আগুন জ্বালতেই এখন তথাকথিত আন্দোলন লগ্নে জন্মানো সেই ‘উনি’র থেকে উৎসবে ফিরে আসার আহ্বান শোনা যাচ্ছে। যাবতীয় আন্দোলনে জল ঢেলে দিতে সেই ‘উনি’ এখন শহর জুড়ে ঘুরে ঘুরে কাঁচি হাতে উৎসবের ফিতে কেটে চলেছেন। ফলে তেনার জন্ম আদৌ ‘আন্দোলন’ লগ্নে কি না যা উনি অহরহ দাবী করে থাকেন তা নিয়ে উঠছে হাজারো প্রশ্ন। কেউ বলছেন ক্ষমতায় বসেই সীমাহীন দুর্নীতি-চিটিংবাজিতে পা হড়কে ওনার যে পরিমাণ পদস্খলন হয়েছে সেখানে দাঁড়িয়ে ‘রেপ-টেপ’ র মত দুর্ঘটনায় ‘আন্দোলন-টান্দোলন’ সহ্য করতে পারা ওনার পক্ষে সম্ভব নয়। বরং সেই ওনার কথা ধার করেই বলতে হয় পাঁচটা ভালো কাজ করলে দু একটা ‘রেপ-টেপ’ এর মত ভুল হতেই পারে। মানে উনি ঘুরিয়ে মেনে নিলেন ওনার দলের ভাই-ভাইপোরা পাঁচটা ভালো কাজ করলেও মাঝেমধ্যে দুষ্টুমি করে দু-একটা ‘রেপ-টেপ’ করে ফেলে! আর এভাবেই এককালের তথাকথিত অপ্রতিরোধ্য বিরোধী নেত্রী ক্ষমতায় বসে ধর্ষক -লুম্পেনদের অপ্রতিরোধ্য বানিয়ে ফেলতে এক হাতে তাদেরকে দরাজ শংসাপত্র বিলি করে চলেছেন আর অন্যহাতে কাঁচি নিয়ে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে ফিতে কেটে ধর্ষণ ও ধর্ষকদের উৎসবের চাদরে ঢেকে দিচ্ছেন।

তাই স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে তাঁর রাজনৈতিক দর্শন কীভাবে এতটা পাল্টে গেল? এমন একজন নেত্রী, যিনি একসময় শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সর্বদা রাস্তায় নামতেন, আজ কেন ক্ষমতার আসনে বসে সেই তিনি প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন বা যারা প্রতিবাদ করছেন তাদেরকে পুলিশ প্রশাসন ব্যবহার করে দাবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন! তাঁর বর্তমান শাসকের ভূমিকা কার্যত তাঁরই অতীতের আন্দোলনের ইতিহাসের ওপর ঝুলিয়ে দিচ্ছে লম্বা লম্বা প্রশ্ন চিহ্ন। তবে কি ক্ষমতায় বসলে তেজ, সততা এবং ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর মনোবল…এসবই হারিয়ে যায়! অতীতের বিরোধী নেত্রী কি তবে ক্ষমতায় বসে নিজের দাবী মত আন্দোলন লগ্নে জন্মেও ‘আন্দোলন-লগ্নভ্রষ্টা’ হলেন! নাকি তার অতীতকে এক নিছকই স্ক্রিপ্টেড পলিট্রিক্স হিসেবে ধরতে হবে!

উত্তর নেই মমতার।

তাই উত্তর খুঁজছে জনতা! উত্তর খুঁজছি আমরাও।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস

পুনশ্চঃ আন্দোলন লগ্নে জন্মানো এক নেত্রী নাকি এখন পুলিশ মন্ত্রী, আর তাঁর পুলিশ অফিসারেরা এখন ডাকাতদের মত মুখে কালো কাপড় বেঁধে পরিচয় গোপন করে আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করছে, শহরের বুকে এমন নজিরবিহীন ঘটনা দেখে আমরা হতবাক!