স্লোগানে শিকল / When Rights Become Risks

কলকাতার ত্রিধারা সম্মীলনীর পূজা প্রাঙ্গণে সাধারণ মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের উপর পুলিশের দমননীতি আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত হেনেছে। একজন ডাক্তার মেয়ের ধর্ষণ, লাঞ্ছনা ও হত্যার ঘটনার সুবিচারের দাবিতে তারা “উই ওয়ান্ট জাস্টিস” শ্লোগান তুলেছিল। এই শ্লোগানের অপরাধে তাদের আটক করেছে পুলিশ, যা স্পষ্টতই একটি দমনমূলক কৌশল এবং মৌলিক অধিকার—বিশেষত বাকস্বাধীনতার—মাথায় লাথি মারার সমান।
এটি প্রথম ঘটনা নয়। পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের ভূমিকা এবং সরকারের কাছে তাদের আনুগত্য প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে বহুবার। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে গেলেই পুলিশকে ব্যবহার করে তাদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হয়। এই হস্তক্ষেপ শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, এটি সরকারের দুর্নীতি ও অপরাধ ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা বলে প্রতীয়মান হয়। বারবার পুলিশ ও প্রশাসন জনসাধারণের মৌলিক অধিকার হরণ করছে, অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এর ফলে পুলিশের চরম দমননীতি অব্যাহত রয়েছে এবং সাধারণ মানুষ দিন দিন আরও হতাশ হয়ে পড়ছে।

বিচারব্যবস্থা কেন পুলিশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন। বিচারব্যবস্থা যদি তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে পুলিশের এই ধরনের কার্যকলাপ আরও বাড়বে। অনেকেই বলছেন, বিচারব্যবস্থার সিদ্ধান্তহীনতা এবং সরকারের প্রতি নরম মনোভাবের কারণেই পুলিশ এবং প্রশাসন এতো বেশি সাহস পাচ্ছে। বারবার আইনের কৌশল প্রয়োগ করে জনগণের প্রতিবাদকে দমন করার ঘটনা বিচার ব্যবস্থার অসহায়তাকে স্পষ্ট করে। সরকার এবং প্রশাসনের মধ্যে একটা অশুভ আপোষ চলছে, যা ক্রমশ গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করছে।
এখান প্রশ্ন হলো, গোটা সিস্টেম কি অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করছে? পুলিশ, প্রশাসন, এবং বিচারব্যবস্থা যদি জনগণের পাশে না থাকে, তাহলে ন্যায়বিচার কোথায় থাকবে? দেশের শাসনব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রয়োজন, এবং শুধু নিন্দা নয়, প্রকৃত বিচার ও আইনের সঠিক প্রয়োগেরও দাবি করতে হবে। সরকারের দায়িত্ব হলো জনগণের অধিকার রক্ষা করা, তাদের কণ্ঠরোধ করা নয়। কিন্তু আজ আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে পৌঁছেছি যেখানে ন্যায়ের দাবি করাটাই অপরাধ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অবশ্য যাদের কাছে আমরা ন্যায়বিচারের আশা করি, তারাই কখনও কখনও অন্যায়ের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। এটাই হয়ত গনতন্ত্রের পাওনা।
ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস
Rathin Nayak
Salam