আমরা সবাই ‘অযোগ্য’ / We are all Incompetent

আজকে রাইজ অফ ভয়েসেস নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যে লেখাটা লিখছে সেটা পড়ে কেউই বা বলা ভালো কোন পক্ষই সন্তুষ্ট হবেন না। উপরন্তু আমাদের কপালে গালিগালাজ জোটবার সম্ভাবনাই বেশি। তবুও শুধুমাত্র আমাদের ভাবনাটা বা দৃষ্টিকোণটা আপনাদের সামনে তুলে ধরাটা এই মুহুর্তে আমাদের কর্তব্য বলেই মনে হয়েছে তাই লিখছি। ভালো লাগলে লাইক দেবেন। অপছন্দ হলে গালিগালাজও দিন। কিন্তু এমন ভাষা ব্যবহার করবেন না যাতে আপনার পারিবারিক রুচি-সংস্কৃতি শিক্ষাদীক্ষা বেআব্রু হয়ে পড়ে।
যাইহোক, মূল বিষয়ে আসি। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যে ২৬,০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী কর্ম্যচ্যুত হয়েছেন তাদের আন্দোলন দাবি দাওয়া ইত্যাদি দেখে আমাদের যেটা মনে হয়েছে সেটা হলো এই জীবিকাচ্যুত মানুষগুলো মমতা-শুভেন্দু-সেলিম-অধীর কাউকেই চায় না। এনারা শুধু যেন তেন প্রকারেণ তাদের চাকরিটা ফেরত পেতে চান। এতে অবশ্য দোষের কিছু নেই। ঘর-সংসার চালাতে গেলে পয়সা লাগে, মাগনায় পেট ভরে না, ঘরও চলে না।
কিন্তু যেটা আমাদের চোখে লেগেছে সেটা হলো এনাদেরকে এদ্দিন কিন্তু যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করতে হবে, OMR প্রকাশ করতে হবে বলে কোন রকম আন্দোলন-অনশন করতে দেখা যায়নি। হয়তো এনারা যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করবার দাবি আইনজীবীদের মাধ্যমে আদালতে বলেছেন কিন্তু জনসমক্ষে সেভাবে কিছু করেছেন বা বলেছেন বলে আমাদের মনে পড়ছে না। আদালতে কোন মামলা বিচারাধীন হলে রাস্তায় নেমে সেই ইস্যুতে আন্দোলন করা যায় না এমনটা তো ব্যাপার নয়, তাহলে…. অথচ চাকরি খোয়াতেই শুরু হয়ে গেলো লাফালাফি দাপাদাপি! যোগ্য অযোগ্য আলাদা করতে হবে, পরীক্ষার OMR শিট প্রকাশ করতে হবে বলে চিৎকার। অথচ মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট আজ যদি অন্যরকম রায় দিতেন বা উলটো রায় দিতেন সেক্ষেত্রে কি আপনারা পথে নামতেন? নাকি দিব্যি ‘অযোগ্য’ সহকর্মীদের সাথে মিলেমিশে শিক্ষকতা করে মাসগেলে মাইনে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতেন! প্রশ্নটা অপ্রিয়, কিন্তু উঠছেই। তবে এই একটা প্রশ্ন নয়, আছে আরও বহু প্রশ্ন। যেমন, সুপ্রিমকোর্টের রায় সামনে আসবার পর কার বা কাদের বুদ্ধিতে আপনারা গিয়ে চড়াও হলেন জেলার ‘ডিআই’ অফিসগুলোতে? আর যদি নিজেদের বুদ্ধিতেই গিয়ে থাকেন তাহলে কেনই বা আপনাদের হঠাত এই ইচ্ছে হলো? কেন গেলেন না রাজনৈতিক ক্ষমতাধর চাকরি চোরদের বাড়িতে বা অফিসে যারা পয়সা খেয়ে যোগ্যদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের তালিকা বানিয়েছে? আমাদের রাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষিকা সমাজ কি শক্তের ভক্ত, নরমের যম, তাই তাঁরা বেছে নিলেন অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও কম প্রভাবশালী প্রতিপক্ষকে। রাজনৈতিক নেতাদের ফেলে ধরলেন গিয়ে প্রশাসনিক আধিকারিকদের! আপনারা তো টিচার! আপনারা জানতেন না দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর ডিআই অফিসে কাজকরা সরকারি অফিসারদের হাতে আর কিছু থাকে না! তারপরেও কেন? কার বা কাদের বুদ্ধিতে? কেউ কি আপনাদের আন্দোলনের অভিমুখটা কলকাঠি নেড়ে কালীঘাট বা কাঁথির দিক থেকে ‘ডিআই’ অফিসে ঘুরিয়ে দিল। এই ‘ধন্দ’টা আমাদের রাইজ অফ ভয়েসেসের কিছুতেই যাচ্ছে না।
একটা কথা স্পষ্ট করে শুনে নিন। এই মুহুর্তে আপনাদের চাকরি ফিরে পাওয়াটা টিকে আছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি যদি রিভিউ পিটিশন ফাইল করবার অনুমতি দেন এবং সেই রিভিউ পিটিশনে রাজ্য সরকার বা পর্ষদ যদি যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা হলফনামার মাধ্যমে জমা দেয় যা মহামান্য আদালত গ্রহণযোগ্য বলে মনে করে তবেই। তাছাড়া আদালত সরকার বা পর্ষদের দিকে পালটা প্ত্রশ্ন ছুঁড়ে দিতেই পারে এই বলে যে এদ্দিন জমা না দিয়ে যখন আদালত রায় ঘোষণা করে দিয়েছে তারপর এখন এই তালিকা জমা দিচ্ছেন কেন ? কোথায় পেলেন এই তালিকা? কারণ এই আদালতেই এর আগে শিক্ষা দপ্তর/ পর্ষদ জানায় যে তাদের কাছে যোগ্য অযোগ্য আলাদা করবার জন্য চাকরীপ্রার্থীদের পরীক্ষার যে OMR শিট দরকার তা নেই। সেসব নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এখানে মনে করিয়ে দিই, এখন শুধু আদালতে যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা জমা দিলেই হবে না তারসাথে ব্যাকআপ হিসেবে OMR শিট বা তার ডিজিটাল প্রতিলিপিও লাগবে। এরপরেও যে ব্যাপারটা মিটবে তাও নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে আদালতের চোখে রাজ্য শিক্ষা পর্ষদের বিশ্বাসযোগ্যতা যে এক্কেবারে তলানিতে তা বলাই বাহুল্য। কাজেই তাদের দেওয়া তালিকা বা OMR ( যদি আদালতে জমা দেয়) আদৌ কতটা ভরসা দিতে পারবে আদালতকে সে ব্যাপারেও আমরা যথেষ্ট সন্দিহান।
কাজেই আমাদের এই চাকরিচ্যুত ২৬,০০০ বঙ্গবাসীকে অনুরোধ, খুব একটা আশায় থাকবেন না। ফের একবার পরীক্ষায় বসবার জন্য প্রস্তুত হোন অথবা বিকল্প আয়ের পথ খুঁজুন। কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সম্ভবত আপনাদের সাথে ঘটতে চলেছে।
আর সবশেষে আমরা একটা কথা একটু জোর দিয়ে বলতে চাই। শিক্ষাঙ্গন মূলতঃ শিক্ষাদানের জায়গা, চাকরিপ্রদানের জায়গা নয়। কাজেই চাকরিহারাদের জন্য হাপিত্যেশের পাশাপাশি অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে আমাদের সন্তানদের আমরা পড়াব না আমাদের মধ্যে এই সচেতনতাটা আশাও জরুরি। মনে রাখবেন স্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাটা কিন্তু ছাব্বিশ হাজার নয়, গুনলে ২৬ লাখেরও অনেক বেশি। ওদের ভোট নেই, তাই কি ওদের হয়ে সেভাবে বলবার লোক নেই ? জানতে চাই আমরা। আর শুধু অভিভাবক-অভিভাবিকাদের থেকে নয়, আমরা ভেবেছিলাম কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে থেকেও অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিয়ে স্কুলে পড়ানো চলবে না স্লোগান কে সামনে রেখে কোন গণআন্দোলন গড়ে উঠবে, কিন্তু সেটাও হয়নি। তাই অযোগ্য কি শুধু ঐ ২৬,০০০ ! আমরা নই ! আমরা এই প্রশ্নটা করছি নিজেদেরকে। আপনারাও করুন নিজেদেরকে যে যার বাড়িতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মধ্যেই আমাদের রাজ্যের হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার ক্ষীণ আশাটা লুকিয়ে আছে। আমাদের আশা, হৃত গৌরব ফিরে পাওয়ার আশা’টা বাঁচবে। আর সেই আশা নিয়েই ফের আরেকটা নতুন বছরে পা রাখছি।
সবাইকে বাংলা শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
Nk ghosh
আসলে গোড়ায় গলদ ।আগেকার দিনের বিধবা পিসিমা র যেমন সবেতেই মাছের ছোঁয়া আছে বলে ভয় পেতেন ।এখানেও অনেকেই রাজনীতির ছোঁয়া কে ভয় পান ।এই রাজনৈতিক জ্ঞানের অভাব থেকেই তারা শত্রু মিত্র চিনতে ভুল করে এমন সরকার কে এনেছেন যাদের জন্য প্রত্যক্ষ ভাবে তাদের এই হল ।ভালো ,বুদ্ধিমান লোকেদের রাজনীতিতে অনীহা থাকলে তাদের চোর বদমাস দের দ্বারাই শাসিত হতে হয় ।এখনো সময় আছে ,রাজনৈতিক ভাবে বন্ধু ,শত্রু চিনতে শিখুন ।