নীরবে নিভৃতে ওরা / Twisted Agendas

তিলোত্তমার নির্মম হত্যাকাণ্ড বাংলার বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে, এবং মানুষের দাবি একটাই—ন্যায়বিচার। কিন্তু এই ন্যায়বিচারের দাবিকে কেন্দ্র করে রাজনীতি এখন ভিন্ন পথে চলার চেষ্টা করছে। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি থেকে শুরু করে, নবান্ন অভিযানের নামে নতুন নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ, সবকিছুই যেন তিলোত্তমার বিচারের আসল দাবিকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি, ছাত্র সমাজ নামে তিনজন অজ্ঞাত পরিচয় ছাত্র আগামী ২৭ আগস্ট নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে। প্রথমে এবিভিপি এর অভিযানের সাথে তাদের যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছিল, যা এবিভিপি পরে খণ্ডন করে। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদারসহ বিজেপি নেতাদের এই অভিযানে সমর্থন এবং সাথে বঙ্গমিডিয়ার এই অভিযানের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া, জনগণের মধ্যে সন্দেহের বীজ বপন করেছে। মানুষ এখন মনে করতে শুরু করেছে যে, এই আন্দোলনের পিছনে আসলে বকলমে বিজেপি-র মদত রয়েছে।

যেখানে বাংলার মানুষ তিলোত্তমার জন্য প্রকৃত ন্যায়বিচার দাবি করে রাস্তায় নেমেছে, সেখানে এই ধরনের রাজনৈতিক প্রচার এবং বিভ্রান্তিকর উদ্যোগগুলো আন্দোলনের অভিমুখকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে মানুষ জানে, তাদের লড়াই তিলোত্তমার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য, কোনও রাজনৈতিক দলের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয়। বাংলার মানুষ চায় সমাজ বদলাক, যেখানে তিলোত্তমার মতো আর কোনও মেয়ে কখনও এমন নৃশংসতার শিকার না হয়।

ডিওয়াইএফএই-এর সদস্যরা যেমন তিলোত্তমার মৃতদেহ বহনকারী গাড়ি আটকিয়ে, রক্ষণাবেক্ষণের নামে হাসপাতালের মধ্যে ক্রাইম সিনের প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা রুখে দিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, তেমনই বাংলার মানুষও জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা কোনও রাজনৈতিক নাটকের অংশ হবে না। তিলোত্তমার ন্যায়বিচারের দাবি একান্তই মানবিক, আর তা কোনওভাবেই রাজনৈতিক প্রচারে পরিণত হতে পারে না।

তিলোত্তমার ঘটনার পর রাজ্য সরকার মহিলাদের জন্য নাইট শিফট থেকে অব্যাহতির প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। কিন্তু এটি কোনও স্থায়ী সমাধান নয়, বরং তিলোত্তমার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর জন্য প্রকৃত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের রাস্তায় নামা এই উদ্দেশ্যেই, যাতে সমাজ বদলায়, প্রশাসন বদলায়, এবং এমন নির্মম ঘটনা আর কখনও না ঘটে।

হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে ধর্মগুরু ও প্রতিষ্ঠানগুলোর হিরন্ময় নিরবতা, বঙ্গ বিজেপি নেতাদের রাজনৈতিক অভিসন্ধি এবং মিডিয়ার অতিরিক্ত মনোযোগ—সবকিছুই বাংলার মানুষের প্রকৃত লড়াইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তবে, বাংলার মানুষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তাদের লক্ষ্য তিলোত্তমার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সমাজকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা; কোনও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি নয়।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস