ডলারে ইনভেস্ট: আপনার ঘরোয়া ফরেন পলিসি? / USD to INR

ভারতের আর্থিক দুনিয়ায় চুপচাপ ঘটে গেছে এক বিপ্লব, যার নাম “হর ঘর ডলার, হর বার রিটার্ন”।
শেয়ার মার্কেট, ব্যাংক ইন্টারেস্ট, সল্প সঞ্চয়, ফিক্সড ডিপোজিট সব বাদ দিন! এখন কেবল ডলার (অক্ষয় কুমারেরটা নয়, এটা দোলান্ড ট্রাম্পেরটা)।

তা এক বছরে রিটার্ন কত?

২০২৪ সালে ১ ডলার = ৮৪.৬৮ টাকা
২০২৫ সালে ১ ডলার = ৯০.২৯ টাকা

মানে ডলারের দাম বেড়েছে ৫.৬১ টাকা, অর্থাৎ প্রায় ৬.৬২% রিটার্ন! মাষ্টারস্ট্রোক।

কোনো রিস্ক নেই, কোনো মিউচুয়াল ফান্ড এজেন্ট নেই, শুধু বছরের শেষে ড্রয়ারের কোণে ১০০ ডলার রেখে দেখুন, এক বছর পর আপনার ড্রয়ারই বলে দেবে আপনি কতটা লাভ করলেন।

ভারতের আর্থিক উন্নতির চমকপ্রদ দিনে, যেখানে শেয়ার বাজার ওঠানামা করে বারো মাসে বারো রকম, সেখানে উঠেছে এক নতুন ব্যক্তিগত উদ্যোগ, “হর ঘর ডলার, হর বার রিটার্ন”।

অর্থনীতিবিদরা মাথা চুলকাচ্ছেন, সরকার ভাবছে বিদেশি রিজার্ভ কোথায় যাচ্ছে আর এদিকে ভারতীয় পরিবারের ঝাঁপি, ড্রয়ার, ট্রাঙ্ক ও আলমারিতে চলছে ব্যক্তিগত ফেডারেল রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট খোলার প্রস্তুতি।

রিপোর্ট বলছে,২০০৫-এ ১ ডলার ছিল ৪৫.৭৪ টাকা।
২০১৫-তে হলো ৬৬.৭৫ টাকা।
২০২৪-এ এসে দাঁড়ালো ৮৪.৬৮।
আর ২০২৫-এ তা লাফিয়ে ৯০.২৯।

অর্থাৎ গত ২০ বছরে ডলারকে ছাড়া ভারতের আর্থিক কোনো জিনিসই এত ধারাবাহিকভাবে উর্ধ্বমুখী হয়নি।

না শেয়ার বাজার,
না ব্যাংকের ইন্টারেস্ট,
না রাজনৈতিক নৈতিকতায়।

দেশের জনগণ তাই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে “ভোট যাকে খুশি দিই, কিন্তু সেভিংস কাকে দেব সেটা ডলারই নির্ধারণ করুক”।

তা ঘরে ডলার রাখার সুবিধা কি?

  • নোটবন্দির হ্যাপা নেই
  • ব্যাংকের লিংক ফেল নেই
  • ব্যালেন্স মিনিমাম রাখার লজ্জা নেই
  • কেউ জিজ্ঞেস করবে না “নমিনি কে?”
  • ইন্টারেস্ট কমলে মন খারাপ নেই – কারণ এখানে ইন্টারেস্ট বাড়ে সরকারের দুর্ধর্ষ নীতিতে, আপনার ভাগ্যে নয়
  • লকার ভাড়া নেই
  • আর ডলার থাকলে বন্ধুদের সামনে একটা প্রেস্টিজও থাকে

উল্টোদিকে বিশেষজ্ঞরা মাথা চুলকাচ্ছেন।

অর্থনীতিবিদ পল্টু বলছেন: “এটাকে সেভিংস বলা যায় না, এটা ভারতীয় ব্যক্তিগত ‘ফরেক্স ম্যানেজমেন্ট’।

অর্থনীতিবিদ ফটিক আরও নির্লজ্জ ভাবে বললেন: “আমাদের দেশে টাকার অবমূল্যায়নই এখন জনগণের সবচেয়ে বড় ইনভেস্টমেন্ট অপশন।”

এ সব শুনে পাড়ার সবজান্তা বিশু বলছে, “ফিক্সড ডিপোজিট করলে ব্যাংক দেয় ৬-৭% – সাথে ঝামেলা ফ্রি। অন্যদিকে ডলার রাখলেই পাচ্ছি ৬-৭%, ঝামেলা ছাড়াই। তাহলে দোষ কোথায়?”

তাই “ডলার রাখুন, রিটার্ন দেখুন”। এ যেন ভারতীয় অর্থনীতির নয়া রূপকথা, যেখানে জনগণ দেশের মুদ্রাস্ফীতি বাঁচাতে পারে না, কিন্তু নিজের সেভিংস বাঁচাতে পারে চার-পাঁচটা আমেরিকান কাগজেই।

এই প্রতিবেদন পড়ে রিজার্ভ ব্যাংক কী ভাববে জানি না, তবে আমাদের মনে শুধু একটাই প্রশ্ন:

“এটা কি মাস্টারস্ট্রোক… নাকি দেশের মুদ্রানীতির ডিজাস্টার, যাকে আমরা মজা করে বিনিয়োগ ভাবছি?”

রিটার্ন কিন্তু বাস্তব।
ব্যঙ্গও বাস্তব।
এটাই ভারতের সনাতনী অর্থনীতি।

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস