জাতিসত্ত্বার সাট্টা / Divide, Label, Destroy: The Bengal Identity Under Siege

গুরুগ্রাম, বেঙ্গালুরু, মুম্বই, পুণে বা হায়দ্রাবাদে বসবাসকারী (ছেলে-বউ, মেয়ে-জামাই বা ভাই-বোন)-ওয়ালা কলকাতার এলিট বাঙালীকে বুঝতে হবে আপাতত ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া হদ্দ গরিব-প্রান্তিক বাঙালীরা বিজেপি-আরএসএস ইকোসিস্টেমের হাতে আক্রান্ত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আগামী দিনে সেই আক্রমণ এলিট প্রবাসী বাঙালীদের ওপরও যে নেমে আসবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
ইংরেজিতে একটা কথা আছে “give a dog a bad name and hang him” !
এক্ষেত্রে যেমন বলা হচ্ছে ‘অনুপ্রবেশকারী’, আপনার এলিট প্রবাসী আত্মীয়টিকে হেনস্থা করবার সময় বলা হবে “বহিরাগত”! কখন দিল্লির জয়হিন্দ বস্তি, চিত্তরঞ্জন পার্কে নেমে আসবে ধরতেও পারবেন না। মনে রাখবেন ইতিমধ্যেই এপ্রিল মাসে চিত্তরঞ্জন পার্ক সংলগ্ন বাঙালী বাজারে মাছ বিক্রি করা যাবে না এই ফতোয়া জারি করতে হিন্দুত্ববাদী বজরং বাহিনী হানা দিয়েছিল। এরপরও সচেতন না হলে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ না করলে কলারে ‘টান’ পড়বেই তা সে ‘ব্লু’ হোক অথবা ‘হোয়াইট’!
কাজেই সবাই মিলে একদিকে রাজ্য সরকারে ক্ষমতাসীন তৃণমূলকে বলুন ‘কেষ্ট’ ওরফে ‘খিস্তি’ মণ্ডলকে পাশে নিয়ে ভাষা আন্দোলনের নাটক না করে তারা বরং প্রাতিষ্ঠানিক চুরি চিটিংবাজি বন্ধ করে রাজ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মন দিক। আর অন্যদিকে বাংলা ও বাঙালি বিদ্বেষী বিজেপিকে চেষ্টা করুন কায়মনোবাক্যে বর্জন করতে। এমনিতেই বঙ্গ বিজেপির ফার্স্টবেঞ্চ জুড়ে তৃণমূলেরই একদল ‘ছাঁট’ দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা বসে আছেন, যাদের সাথে শুধু হিন্দুধর্ম কেন, কোন ধর্মেরই কস্মিনকালে কোন সম্পর্ক ছিল না। এদেরকে ধর্মপ্রাণ ভাবা আর ‘সনাতন’ শব্দগুচ্ছের সাথে হরোতন-রুইতন-ইসকাপন গুলিয়ে ফেলা একই ব্যাপার।
তাছাড়া মনে রাখবেন বাংলা ও বাঙালীকে বিজেপি-আরএসএস ইকোসিস্টেম চিরকালই ‘খাটো’ করে দেখাতে চেয়েছে। এক ফেক ডিগ্রিধারী চিটিংবাজ মহিলাকে ‘মা-দুর্গা’ বলে তুলে ধরা ছিল সেই চক্রান্তেরই অংশ। এমনকি হাজারো চুরি -দুর্নীতির প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ওই মহিলা ও তার পরিবারবর্গ এবং ঘনিষ্ঠ পারিষদদের জেলে না ঢুকিয়ে বাইরে ছেড়ে রাখবার মধ্যেও লুকিয়ে রয়েছে বাংলা ও বাঙালীর শিক্ষা, সামাজিক ঐক্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও গরিমাকে বিনষ্ট করে দেওয়ার অপচেষ্টা! কারণ সংঘ পরিবার জানে ইনি হলেন সেই দক্ষিণপন্থী বাঙালী চিটিংবাজ যাকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে লাগাতার ব্ল্যাকমেল করে একদিকে যেমন নিজেদের অ্যাজেন্ডা রূপায়ন করা যায়, ঠিক তেমনই বাকি দেশের সামনে বাংলা ও বাঙালীকে একটি আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত লুম্পেন জাতি হিসেবে দাগিয়েও দেওয়া যায়। বাংলা আর গো-বলয়কে, ক্ষুদিরাম আর নাথুরামকে, নেতাজী সুভাষ আর মুচলেকাবীর সাভারকারকে মুড়ি-মিছরির মত এক গোত্রে ফেলে দেওয়া যায়।

বিশ্বকবির গীতাঞ্জলি আর মূর্খকবির কথাঞ্জলি এক জিনিস নয়। কাগজে মুড়ে ঘুষ খাওয়া কাঁথির মেজকা মাথায় গেরুয়া পাগড়ি বাঁধলেই বিবেকানন্দের চটিতে পা গলাতে পারেন না। আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাপতি আর তৃণমূল লুম্পেন বাহিনীর সেনাপতির মধ্যে গুলিয়ে ফেলাটা অপরাধ।
কাজেই জাগো বাঙালী জাগো! তোমাকে বুঝতে হবে, নিজের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, গরিমা ও আত্মসম্মানবোধ জলাঞ্জলি দিয়ে জাতির অস্মিতা বাঁচানো যায় না। আর তাই বিজেপি-আরএসএসকে আটকাতে তৃণমূলী লুম্পেনবাহিনীর সাথে এক মিছিলে হাঁটাও যায় না। জাতিসত্ত্বা নিয়ে সাট্টা খেলে এভাবে নিজেদেরকে ঠাট্টা বা উপহাসের বস্তু আর বানিও না।
তাই বিকল্প ভাবো। আর শুধু ভাবা নয়, ‘বিকল্প’টাই এবার দলবেঁধে প্র্যাকটিস করো। আর সময় নেই।
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
Jahirul Alam Mallick
ভালো লাগলো