এটা এপিটাফ… / The Epitaph

একদা বাংলায় সিপিআই(এম) বলে একটা দল ছিল। আলিমুদ্দিন স্ট্রীট ছিল সেই দলের সদর দপ্তর। সেই সদর দপ্তরে দলীয় কাজকর্ম পরিচালনার জন্য কিছু দূরদর্শী নেতাও ছিলেন। তাঁরা জানতেন এবং বুঝতেন বাংলার মানুষের ভাবাবেগ কিভাবে কোন খাতে বইছে বা ভবিষ্যতে বইবে। সেইমত রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে থেকেও তাঁরা যতটা সম্ভব বাংলার মানুষের মনোভাব কে মর্যাদাও দিতেন। তাঁরা জানতেন মানুষকে নিয়ে কোন কোন ইস্যুতে ঠিক কখন কিভাবে দলীয় পতাকা নিয়ে রাস্তার আন্দোলনে ঝাঁপাতে হয়। কৃষি প্রধান গ্রাম অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গে ‘অপারেশন বর্গা’ ছিল সেরকমই একটা যুগান্তকারী আন্দোলন ও তার বাস্তবায়নের অন্য নাম। আর তার সাথে ছিল অবৈতনিক সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থার রাজ্যব্যাপী বিস্তার। এই দুটি কাজ বাংলার একটা বড় অংশের মানুষকে দিয়েছিল আত্মনির্ভরতা ও আত্মসম্মান।

স্বাধীনতা উত্তর বাংলার সবথেকে উল্লেখযোগ্য দুটি পদক্ষেপ ছিল এই দুটি। এমনকি ‘সমাজ সংস্কার’ বললেও অত্যুক্তি হয় না। তা বলে তখনকার সিপিআই(এম) নেতারা কি কখনও ভুল করতেন না! অবশ্যই করতেন। মানুষ মাত্রই ভুল করে। কিন্তু তারপরেও জনগনেশ তাঁদেরকে ভোটবাক্সে সমর্থন জুগিয়ে যেতেন। কারণ বাংলার বড় অংশের মানুষ মনে করতেন এই দলটা আমাদের দল। আর তারই ফসল ছিল ৩৪ বছর। সিপিআই(এম) দলটার জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকার মূল ভিত্তিও ছিল এটা। ‘বামফ্রন্ট’ বলে একটা খান দশেক (যা পরবর্তীতে এক ডজনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল) বামপন্থী ও সমভাবাপন্ন দলের পোশাকি ফ্রন্ট থাকলেও তার মূল চালিকাশক্তি ছিল এই সিপিআই(এম)ই। বাংলার মানুষও মুলতঃ সিপিআই(এম) কে দেখেই বামফ্রন্টের শরিক দলের নেতাদেরকে ভোট দিতেন এবং জেতাতেন। শরিকদলের নেতারা আজ তা না মানলেও এটাই ছিল বাস্তব! আর একথা মাথায় রেখেই আলিমুদ্দিন স্ট্রীটের নেতারা কখনও এমন কোন কাজে মদত দিতে চাইতেন না, যাতে তাদের দল ও সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ তাঁরা বুঝতেন দল দুর্বল হয়ে পড়া মানে বাংলার বৃহত্তর জনসমাজকে বিপক্ষ দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক শক্তির হাতে তুলে দেওয়া। তাই এব্যাপারে তাঁরা যথেষ্ট সতর্ক ও যত্নবান ছিলেন। নিচুতলার কিছু অত্যুৎসাহী নেতা বেশ কিছু এলাকায় স্থানীয় স্তরে ‘দলতন্ত্র’ কায়েম করে ফেললেও তার মধ্যেও আলিমুদ্দিন থেকে একটা ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ রাখবার চেষ্টাও থাকতো। মানুষ সেই চেষ্টাটা দেখতেও পেত। ফলে এমন বহু মানুষকে সেই সময় দেখা যেত যারা সারা বছর ‘সিপিএম’এর স্থানীয় নেতা ও তাদের মেন্টর’দের নিজেদের ব্যক্তিগত পরিসরে ‘লেনিনের বাচ্চা-স্টালিনের বাচ্চা’ বলে গালিগালাজ করেও ভোটের দিন সক্কাল বেলা সবার আগে সপরিবারে বুথে গিয়ে কাস্তে হাতুড়ি তারায় ছাপ মেরে বাড়ি ফিরে ফের গালিগালাজ করা শুরু করতেন।

এখন যে কোন সংসদীয় গণতন্ত্রে কোন দলই চিরকাল ক্ষমতাসীন থাকে না। সিপিআই(এম) তথা বামফ্রন্টের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু যেটা ব্যতিক্রমী ঘটনা সেটা হলো সংসদীয় গনতন্ত্রে হেরে যাওয়ার এক দশকের মধ্যে একটা দলের এভাবে ‘লক-স্টক-ব্যারেল’ লাটে উঠে যাওয়া। আর আস্ত সিপিআই(এম) দলটাকে এভাবে লাটে তুলে দেওয়ার কারিগর কোন মমতা ব্যানার্জ্জী বা নরেন্দ্র মোদী নয়! কিছুটা এর দায় কেন্দ্র ও রাজ্য, এই দুই শাসকের ‘দলদাস’ বঙ্গ মিডিয়ার ঘাড়ে অবশ্যই চাপানো যায় ঠিকই, কিন্তু তারপরেও এই মুহুর্তে আলিমুদ্দিন স্ট্রীটে বসা নেতারা এর দায় কিছুতেই এড়াতে পারেন না। এই নেতাদের ক্ষেত্রে যে দুটো শব্দ নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায় তা হলো এনারা ‘অপরিণামদর্শী’ এবং ‘অপদার্থ’।

কেন আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস এত কঠিন শব্দবন্ধ ব্যবহার করছি তা লিখতে গেলে প্রথমেই যেটা বলতে হয় সেটা হলো আজকের আলিমুদ্দিনের নেতারা তাদের ‘কাস্তে-হাতুড়ি-তারা’ দলীয় পতাকা হাতে আন্দোলন করতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না। ২০১১ পরবর্তী সবকটা জ্বলন্ত ইস্যুতে রাজ্যের তৃণমূল সরকার অথবা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এনারা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ গোছের একটা পতাকাবিহীন সংগঠন খুলে গণআন্দোলনকে পরিচালিত করতে চেয়েছেন এবং তার রাজনৈতিক ডিভিডেন্ড ঘরে তুলতে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। চিটফান্ড সাফারার্স ইউনিটি ফোরাম দিয়ে এর শুরু। তারপর ‘আক্রান্ত আমরা’ থেকে শুরু করে দিল্লির কৃষক আন্দোলনের ‘সংযুক্ত কিষান মোর্চা’ ও ‘এনআরসি’ নিয়ে পতাকাবিহীন উত্তাল আন্দোলনের হাতঘুরে আজকের ‘অভয়া মঞ্চ’ ! সবেতেই এক ছবি। ২৬,০০০ চাকরিহারাদের নিয়ে কোন মঞ্চ বা মোর্চা খুলেছে কি না জানি না। তবে সেখানেও দেখলাম ‘অভয়া মঞ্চ’ গিয়ে হাজির হয়েছে। ‘আক্রান্ত আমরা’ বা ‘চিটফান্ড সাফারার্স’রাও হয়তো যাবেন একদিন। এদিকে চাকরিহারাদের এক অংশের শাসক ঘনিষ্ঠতার কারণে তারা তাদের আন্দোলনটাকে ‘পতাকাবিহীন’ অরাজনৈতিক রাখতে চাইছেন। আর এমনিতে মিডিয়াও হাউজ গুলো নিজেরা রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসকের দলদাস বৃত্তি করলেও ‘অ্যাপলিটিকাল’ শব্দবন্ধটির প্রতি এদের দুর্বলতা বহুদিনের যা জনমানসকে কিছুটা হলেও প্রভাবিত করে। আর তাই চাকরিহারাদের ‘পতাকাবিহীন’ আন্দোলন অবশেষে বাকি পতাকাবিহীন আন্দোলন গুলোর মতই বিশাল ‘অশ্বডিম্ব’ প্রসব করেছে। অথচ একটু তলিয়ে ভেবে দেখলেই দেখা যাবে এই ২৬,০০০ টিচার ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে যাওয়াটা মোটেই শুধু ঐ ২৬,০০০ চাকরিহারার ব্যক্তিগত পারিবারিক সমস্যা নয়, এটা সারা রাজ্যের সরকারী শিক্ষাব্যবস্থার বিপদ। এইকথাটা মানুষকে স্পষ্ট করে বলে এটা নিয়ে লাগাতার পতাকা হাতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করাটা যে জরুরি সেটা আলিমুদ্দিনের নেতারা বুঝছেন না। তারা ভাবছেন চাকরিহারাদের আন্দোলন মঞ্চে একবার দুবার ঘুরে এলেই কাজ শেষ। বাকিটা ‘অভয়া মঞ্চ’ বা অন্যরা বুঝে নেবে। মানে সিপিআই(এম)র মত একটা আপাদমস্তক রাজনৈতিক দল টিকে থাকতে চাইছে অরাজনৈতিক পতাকাবিহীন আন্দোলনের ওপর ভর করে এটা ভাবলেই শিউরে উঠতে হচ্ছে!

আর তারপর শিয়রে ভোট এলে আলিমুদ্দিনের নেতাদের অপদার্থতাটা এক ঝটকায় উলঙ্গ হয়ে সামনে চলে আসে। ভোট কিভাবে আসবে তা নিয়ে এঁদের কোন মাথা ব্যাথা থাকে না। যত মাথাব্যাথা থাকে তা সব জোট নিয়ে। জোট জট ছাড়াতে ছাড়াতেই ভোট শেষ। তা কোন দলের সাথে জোট…. কংগ্রেস। বঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসে ‘অধীর যুগ’ চলাকালীন মুর্শিদাবাদ ও মালদা ছাড়া কোথাও যে দলের কোন অস্তিত্বই চোখে পড়তো না, আর অধীর যুগ অবসানের পর যে দলটার সাইনবোর্ডটাও আর নেই, উঠে গেছে, সেই দলের সাথে নাকি ‘জোট’ নিয়ে আলোচনা! সাথে দোসর আইএসএফ। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে আইএসএফ কে সাথে নিয়ে সিপিআই(এম) যে একটা ‘প্রাগৈতিহাসিক ভুল’ করেছিল তা ভোটের ফলাফলেই প্রমাণিত হয়েছে- কপালে জুটেছে শূন্য আসন ও ৭% ভোট। জলসা করে বেড়ানো ‘ভাইজান’দের সাথে গা ঘষাঘষি করার ফলে যে সংখ্যাগুরু প্রতিষ্ঠান বিরোধী শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ভোট সবটাই বিজেপিতে চলে যাবে এটা না বুঝতে পারা টা কোন ‘জনবিচ্ছিন্নতা’ নয়, এটাকে ‘অপদার্থতা’ বলে। আমাদের যদি কোন ভুল না হয়, এই আইএসএফ’কে নিয়ে আদিখ্যেতার সূচনাটাও হয়েছিল পতাকাবিহীন ‘এনআরসি’ আন্দোলন দিয়ে। আর এরপরে সর্বোপরি তথাকথিত সমভাবাপন্ন বাম ‘শরিক’ দলগুলো তো আছেই। যে দলগুলোর রাজ্য সম্পাদকদেরকে তাদের নিজের পাড়ার নিজের গলির লোকজনও হয়তো খোঁজ নিলে দেখা যাবে চেনে না। বিগত পাঁচ বছরে এই দলগুলোর কোন ‘নজরকাড়া’ একক রাজনৈতিক কর্মসূচি আমাদের রাইজ অফ ভয়েসেসের অন্তত চোখে পড়েনি। আপনাদের চোখে পড়লে জানাবেন। অথচ এদের সাথে আলোচনা করে এদের ‘সম্মতি’ নিয়ে নাকি বঙ্গ সিপিআই(এম) মানে আলিমুদ্দিনস্থিত নেতারা আজকাল প্রার্থী ঠিক করেন। সম্মতি এলে প্রার্থী দেন, না এলে দেন না। অথচ সিপিআই(এম) প্রার্থী না দেওয়া মানে যে অবধারিত ভাবে পুরো ভোটটাকে বিজেপি আর তৃণমূলের দিকে ঠেলে দেওয়া, এই সহজ কথাটা কেন যে আলিমুদ্দিনের নেতারা বোঝেন না জানি না। মানে সে এক অভাবনীয় পরিস্থিতি। যে বাংলার মানুষ ৩৪ বছর ধরে সিপিআই(এম) কে ভোটে জিতিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করে তুলল তাদের প্রতি আজ আলিমুদ্দিনের ‘পক্ককেশী’ ও ‘কলপ-কালো’ চুলের সিপিআই(এম) নেতাদের কোন দায়বদ্ধতা আছে বলে মনে হচ্ছে না। এনাদের যত দায়বদ্ধতা তা শুধু কংগ্রেস আর আইএসএফ-এর প্রতি আর বামফ্রন্টের শরিক দলগুলোর প্রতি। বামফ্রন্ট বাঁচাতে এঁরা যতটা যত্নবান বাংলাকে বাঁচাতে এরা ততটা আগ্রহী নন। আর এভাবেই এনারা নিজেদের সমস্ত ভোট ব্যাঙ্কটাকেই কার্যত প্রতিটা নির্বাচন ও উপনির্বাচনে তৃণমূল ও বিজেপিকে ‘ভেট’ দিচ্ছেন। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার মত বড় দুটি জেলার বামপন্থী সংখ্যালঘু ভোটের একটা ভালো অংশ ইতিমধ্যেই ‘আইএসএফ’ নামক উটকো দলটিতে ট্রান্সফার হয়ে বসে আছে আলিমুদ্দিনের একশ্রেণীর নেতাদের আইএসএফ কে নিয়ে অতিরিক্ত আদিখ্যেতার কারণে। ভাঙ্গরে আইএসএফ এর রমরমার কারণে যাদবপুরের মতো লোকসভা কেন্দ্রে আজ বামেরা লড়াই দেওয়ার মত জায়গায় আছে কি না তা নিয়ে ভোটের আগে অনায়াসে বিভ্রান্ত্রি ছড়িয়ে দিয়ে ভোটারদের বড় অংশকে তৃণমূল ও বিজেপিতে ঠেলে দেওয়া যাচ্ছে। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন তার হাতে গরম প্রমাণ। আলিমুদ্দিনের নেতারা চেয়ে দেখছেন। তবু সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। নিজের দলকে না বাঁচিয়ে এনারা জোট বাঁচাতে চাইছেন। প্রতিবার মুখ থুবড়ে পড়ছেন কিন্তু শিখছেন না। আর তাই প্রতিটা নির্বাচনে ও উপনির্বাচনে ঘটে চলেছে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি। সাম্প্রতিক কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনেও যে সেই একই ভুল করা হবে তা বলে দিতে কোন পন্ডিত হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আমাদের কাছে যা খবর, হচ্ছেও তাই! এবং এই প্রতিবেদন যখন প্রকাশিত হওয়ার মুখে ঠিক তখনই আমাদের আশঙ্কাকে সিলমোহর লাগিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর কালীগঞ্জ কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি আমাদের হাতে এসে গেছে। এরপর ঐ বিধানসভা ক্ষেত্রের বামপন্থী মানুষজন যে তাদের ভোট ‘বিজেপি’তে দিতে বাধ্য হবেন তা বলাই বাহুল্য। আর যাঁরা বিজেপিকে একদমই পছন্দ করেন না, মানে যাঁরা ‘নো ভোট টু বিজেপি’ পন্থী তারা ভোট দেবেন মাননীয়ার তৃণমূলকে। এরপর কালীগঞ্জ বিধানসভা ক্ষেত্রে এবং তার আশপাশের অঞ্চলের স্থানীয় সিপিআই(এম) নেতা কর্মীরা ঠিক কোন ভরসায় লাল ঝান্ডা হাতে রাজনীতিটা করবেন আমরা জানি না। এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই কালীগঞ্জ বিধানসভা ক্ষেত্রে সিপিআই(এম) দল হিসেবে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের দ্বিগুণের থেকে বেশি ভোট পেয়ে দু-নম্বরে ছিল। এবার কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের পর এখানে সেই বামেদের প্রান্তিক রাজনৈতিক শক্তি হয়ে পড়াটা সময়ের অপেক্ষা।

আর এভাবেই সিপিআই(এম)র মত একটা দলকে তাদের কিছু মুষ্টিমেয় ‘সবজান্তা’ ওপর তলার নেতা বাংলার রাজনীতিতে ক্রমশঃ রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক করে দিচ্ছেন। কমরেড, এটাকে আত্মহত্যা বলে! আপনাদের দল না বাঁচলে জোট বা ফ্রন্ট কোনটাই বাঁচবে না। মানুষ এখন একটা শক্তিশালী বিকল্প খোঁজে। শক্তিশালী দল ছাড়া মজবুত জোট সম্ভব নয়। শক্তিশালী সিপিআই(এম) ছিল তাই বামফ্রন্ট ছিল। তাই মজবুত জোট বা ফ্রন্ট নয়, দলটা যাতে শক্তিশালী হয় সেটা আগে দেখা জরুরি। আর তারজন্য যা যা পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি নিতে হবে। আর তা নাহলে মানুষের কাছে নির্বাচনে ‘রাজনৈতিক বিকল্প’ হয়ে ওঠা আজকের রাজনীতিতে ‘কষ্ট কল্পনা’ মাত্র। আর বাংলার মানুষও একপ্রকার বাধ্যহয়ে দক্ষিণপন্থী বিজেপি-তৃণমূলের চক্করে পড়ে সর্বশান্ত হতে থাকবে। সবথেকে দুর্বিসহ অবস্থা হবে গ্রাম বাংলার প্রান্তিক মানুষগুলোর যারা আপনাদের দলকে ৩৪ বছর ধরে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় রেখে জাতীয় স্তরে আপনাদেরকে সম্মান ও প্রাসঙ্গিকতা আদায় করে দিয়েছিল। তাদের প্রতি যত্নবান হোন। বামফ্রন্ট বা জোট নয়, বাংলার মানুষের প্রতি তাদের ভাবাবেগের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখান। ফ্রন্ট বা জোট নয় , নির্বাচনে-আন্দোলনে নিজের দলকে মানে সিপিআই(এম) কে মানুষের সামনে তুলে ধরুন। না হলে বছর দুয়েক পর আপনাদের দলকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

কাজেই হয় নিজের দলের হাল ও ঝান্ডাটা শক্ত হাতে ধরুন, অথবা এই লেখাটা ‘এপিটাফ’ ধরে নিয়ে পড়ুন।

‘রেস্ট ইন পিস’ লেখাটা আপাতত তুলে রাখছি এই বিষয়ের ওপর আগামী প্রতিবেদনের জন্য।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস