স্বপ্ন ভাঙার গল্প / Broken Dreams

বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এই ভয় আরও বেড়েছে, বিশেষত আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে, যাদের মধ্যে রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান এবং সংখ্যালঘু হিন্দু উভয়ই। ফলে, অনেকেই নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় প্রার্থনা করছেন।
একদিকে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নেতারা, যেমন শুভেন্দু অধিকারী, দাবি করেছেন যে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি সংখ্যালঘু হিন্দু ভারতে আশ্রয় চাইবে, এবং সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, বিএসএফ স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশি সংখ্যালঘু হিন্দুদের সীমান্তে আটকাচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নো ম্যানস্ ল্যান্ডে আটকা পড়ে “জয় শ্রী রাম” স্লোগান দিয়ে ভারতে আশ্রয়ের আকুতি জানাচ্ছে, কিন্তু তাদের জন্য এখনো কোনও সাহায্য এগিয়ে আসেনি। আর কী করা যেতে পারে? এই হাজার হাজার গৃহহীন মানুষের কাঁচা ক্ষতে নুন ঘষা ছাড়া কিছুই কি করার নেই রাজনীতির কারবারিদের! তাদের সত্যিকার অর্থে সাহায্য করার জন্য আর কী করা যেতে পারে, তা প্রত্যেকের ভেবে দেখা উচিৎ।

সম্প্রতি, সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন) এবং এনআরসি (জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন) নিয়ে শাসক রাজনৈতিক দলগুলির আক্রমণাত্মক প্রচার ভারতীয় রাজনীতিতে গভীর বিভাজন সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশি হিন্দু সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। এনআরসি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় তাদের অধিকারগুলি সুরক্ষিত হয়নি। এই বিতর্কিত পদক্ষেপগুলি, ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করা বাংলাদেশি সংখ্যালঘু হিন্দুদের আশ্রয়ের সুযোগকে আরও কমিয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে, ১১ আগস্ট সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো বাংলাদেশি হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরের অস্থিরতা এবং উগ্রবাদী গোষ্ঠীর আক্রমণের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশে অস্থায়ী প্রশাসনকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা ভারত সরকারের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের আলোচনারও আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, অতীতে বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গে উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তাদের নেতৃত্বে হাজার হাজার উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসিত হয়েছিল এবং স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। বর্তমান রাজ্য রাজনীতির পটভূমিতে এই ঐতিহাসিক ভূমিকা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
তবে, বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এই সংকটে সম্পূর্ণ উদাসীন। তাদের কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নেই এবং তারা বরং এই ইস্যু থেকে দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছে। এই উদাসীনতা দুই বাংলার হিন্দুদের মধ্যে গভীর অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
সিএএ এবং এনআরসি দ্বারা সৃষ্ট বিভাজন ও মিথ্যাচারের মাঝে, যারা সীমান্তে আটকা পড়েছেন, তাদের জন্য কোনও আশ্রয় নেই। তবুও, সিপিআই(এম)-এর সতর্ক অবস্থান এবং অতীতে উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে কার্যকর ভূমিকা এই সংকটে একটি সাহসী এবং ন্যায়সঙ্গত অবস্থান হিসেবে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু, বাংলার বিধানসভা ও লোকসভায় তাঁদের কোনও প্রতিনিধিত্ব না থাকায়, তাদের পক্ষ থেকে কিছু করা সম্ভবনা খুবই কম।
বর্তমানে, বাংলার বিজেপি নেতাদের দেওয়া আশ্রয় সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে পার্থক্য সকলের কাছেই স্পষ্ট। সম্ভবত, বাংলার হিন্দু ভোট টানতেই বিজেপি নেতারা এমন বক্তব্য দিচ্ছেন। তাই, রাইজ অফ ভয়েসেস-এর পক্ষ থেকে অনুরোধ, কোনও রাজনৈতিক দল যেন এই বাংলাদেশি হিন্দু সংখ্যালঘুদের সংকটকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে না লাগায়। বাস্তবতা হল সীমান্তের অমানবিক পরিস্থিতি এবং সিএএ ও এনআরসি-র মিথ্যাচার।
সব শেষে, বাংলাদেশি হিন্দু সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি উন্নতির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যা শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়, বরং একটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত।
ধন্যবদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
Comments are closed.