বাংলার বাণিজ্যিক ভবিষ্যৎ: উত্তর কোথায়? / No Strikes, No Growth
একসময় আমাদের রাজ্যে বনধ-ধর্মঘট ছিল রুটিন ঘটনা। ট্রেড ইউনিয়নের “দাদাগিরি” নিয়ে কাটা-ছেঁড়া চলত সর্বত্র। অথচ সেই সময়েই সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ, রাজারহাটের নিউটাউন তৈরি হয়েছিল। তৈরি হয়েছিল চাকরির সম্ভার। টাটা-জিন্দালের মত কোম্পানি এসে দাঁড়িয়েছিল এই রাজ্যের মাটিতে। আজকের দিনে ধর্মঘট নেই। ট্রেড ইউনিয়নের দাদাগিরি ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে স্থান পেয়েছে। তাহলে রাজ্যের বাণিজ্যিক মানচিত্রে শূন্যতা কেন?
তথ্য বলছে, কোম্পানিগুলি আজ পশ্চিমবঙ্গে আসতে চায় না। অফিস স্পেসের চাহিদা সেখানেই থাকে, যেখানে কাজের পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু রাজ্যের রাজধানী কলকাতা যেন আর সেই পরিবেশ দিতে পারছে না। অথচ প্রশ্নটা এখানেই। উন্নয়ন কেন আটকে গেল? সমস্যার শিকড় খোঁজা কি একান্ত প্রয়োজন নয়?
একটা সময়ের যুক্তি ছিল, ধর্মঘট ও শ্রমিক রাজনীতিই কলকাতার বাণিজ্যিক ভবিষ্যৎকে গ্রাস করেছে। কিন্তু সেই যুক্তি এখন আর টেকে না। কারণ, ধর্মঘটের দিন ফুরিয়েছে। শ্রমিক দাদাগিরি গল্প হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও বিনিয়োগ নেই। তাহলে সমস্যার গভীরে কিছু অন্য কারণ রয়েছে।
কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও দেশের প্রথমসারির শহরগুলির সঙ্গে তুলনায় পিছিয়ে। দেশের অন্য রাজ্যে যেখানে একের পর এক কর্পোরেট হাব তৈরি হচ্ছে, সেখানে কলকাতায় আজও সেই সুযোগের ঘাটতি। প্রশাসনিক জটিলতা, দুর্নীতি, এবং বাণিজ্যিক পরিকাঠামোর অভাব বিনিয়োগকারীদের দূরে সরিয়ে রাখছে।
সরকার বারবার দাবি করেছে যে, তারা “ইজ অব ডুয়িং বিজনেস”-এ উন্নতি করেছে। কিন্তু বাস্তবে সেই উন্নতি বড় কর্পোরেটদের টানতে পারছে না। একসময় সল্টলেক থেকে রাজারহাট, পরিকাঠামোর জোরে একটি নতুন দিগন্ত খুলে গিয়েছিল। আজ সেই উদ্যোগের অভাব চোখে পড়ার মতো।
পাশাপাশি বাম আমলে তৈরি হলদিয়া-সেক্টর-৫-রাজারহাট-নিউটাউন জানান দিচ্ছে রাজ্যের উন্নয়ন আদৌ ধর্মঘট বা শ্রমিক আন্দোলনের জন্য থমকে যায়নি, যা সাধারণত প্রচার করা হয়। বরং বাম সরকারের প্রথম দিকে বেসরকারী পুঁজির প্রতি আদর্শগত ‘ছূতমার্গ’ই রাজ্যের শিল্পোন্নয়নের প্রধান বাধা ছিল। আর এই ছূতমার্গ’ই তিন দশকের বাম শাসনের প্রথম দশকে রাজ্যে বেসরকারি শিল্প স্থাপনে সরকারী যথেষ্ট সদিচ্ছার অভাবের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। পরবর্তীতে যা থেকে বেরিয়ে আসতে “কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ” স্লোগানকে বাম সরকার এক প্রকার হাতিয়ার করতে বাধ্য হয়েছিল। যার ফল স্বরূপ এমনকি বামেদের বিদায় কালেও উৎপাদন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে পশ্চিমবঙ্গ সারা দেশের মধ্যে প্রথম সারির রাজ্য গুলোর মধ্যে একটি হিসেবে পরিগণিত হত।
সরকারের কাছে একটাই অনুরোধ। ভুলের দায় চাপিয়ে দিয়ে সমস্যার সমাধান হয় না। বাণিজ্যিকভাবে রাজ্যকে ফের মূলস্রোতে আনতে হলে, পরিকাঠামো, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, এবং বিনিয়োগ-বান্ধব নীতির দিকে জোর দিতে হবে। উত্তর খুঁজুন, কারণ বাংলা হয়ত আর বিলম্ব সইতে পারবে না।
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
Comments are closed.