মদ-মাংস …. ‘বেলি ডান্সার’ / New Trend

বছর পাঁচ-ছয় আগেকার কথা। ২০১৮ র লোকসভা ভোট আর ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের মধ্যেকার সময়টা চলছে তখন। তখনও টুইটার বা ইনস্টাগ্রাম আসে নি। সমাজমাধ্যম বলতে তখন ফেসবুক আর ইউটিউব। সাথে হোয়াটসঅ্যাপ। হঠাৎই আমার মোবাইলে ইউটিউব নিয়ে ঘাটাঘাটি করবার সময় নজরে এলো একটা ভিডিও। মেদিনীপুর জেলার। পূর্ব না পশ্চিম এখন আর ঠিক মনে করতে পারছি না। তবে পূর্ব হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তা যাইহোক, দেখলাম পাড়ার জলসার নামে সেখানে চলছে খুল্লম-খুল্লা মুজরা ডান্স। ঝকমকে ‘স্বল্প’ পোশাক পরিহিতা দুই তরুণী চটুল হিন্দি গানের তালে অশ্লীল শরীরী বিহঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে উপস্থিত জনতার মনোরঞ্জন করছেন। আগে আমরা ইউপি-বিহারের মত উত্তর ও মধ্যভারতের গো-বলয়ের রাজ্য গুলোতে এসব হতো বলে জানতাম। এবার স্বচক্ষে সেই কুরুচিকর দৃশ্য দেখলাম বাংলার মাটিতে। দেখলাম একদল বাঙালী সেই যৌন উত্তেজক নাচ দেখে উল্লসিত, টাকার নোট ছুঁড়ছেন মঞ্চের নর্তকীদের দিকে। মঞ্চের ব্যাকগ্রাউন্ডে টাঙ্গানো ব্যানারে শুদ্ধ বাংলায় এই জলসা’র উদ্যোক্তাদের নাম-ধাম গোদা বাংলায় লেখা ছিল। কি লেখা ছিল সেসব আর মনে না থাকলেও ‘মেদিনীপুর’ লেখা শব্দটা এখনও মনে আছে এবং তা দেখে আমি আঁতকে উঠেছিলাম। কারণ মেদিনীপুর জেলা মানেই আর পাঁচজন বাঙ্গালীর মত আমার চোখের সামনেও যে দুজনের পাঠ্য বইতে দেখা ছবি ভেসে ওঠে তাঁরা হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আর মাতঙ্গিনী হাজরা। সেই জেলার মাটিতে কি না খোলা মঞ্চে মুজরা নাচ। ঘটনাটা এতটাই বিরক্তিকর লেগেছিল আমার কাছে যে প্রবাসে বসে আর কিছু না ভেবে সোজা ফোন স্কুলের বন্ধুকে। আমার বন্ধুটি ফোনের ওপর প্রান্তে সব শুনলো। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ‘সব গেছে’।
তারপর দিন গেছে। রাত গেছে। আমরা আবার যে যার জীবন বৃত্তে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। মাঝে একটা ‘টিপটিপ বরষা পানি’ গানের সাথে শাসকদলের একগুচ্ছ নেতার একদল সমবয়সী সহপাঠী তরুণীর সাথে কৃত্রিম ফোয়ারার নিচে উদ্দাম অশ্লীল নাচের ভিডিও নজরে এসেছিল এবং খোঁজখবর করে যদ্দুর জানতে পেরেছিলাম অকুস্থলটি আমাদের প্রাণের শহর তিলোত্তমা কলকাতাই। তাতে অবাক হই নি। কারণ আমার তো তদ্দিনে জানা হয়ে গেছে ‘সব গেছে’।
কিন্তু তখনও আমি বা আমার সেই বন্ধু, দুজনেই জানতাম না যে, না! সবটা তখনও যায় নি! আরও একটু যাওয়ার বাকি ছিল!
আর সেই অধঃপতনের বাকিটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ভৈরব গাঙ্গুলী কলেজ। কলেজের বাৎসরিক ‘ফেস্ট’। তাতে ভাড়া করে আনা হলো ‘বেলি ডান্সার’। জাস্ট ভাবা যায় না। আমরা রাইজ ভয়েসেস মনে করি,‘বেলি ডান্স’ এর নামে ন্যুনতম বক্ষ ও কটি আবরণ দিয়ে কোনক্রমে লজ্জা নিবারণ করে উন্মুক্ত নারীদেহের ঝটকা আর নিতম্ব আন্দোলনকে এই বাজারি সভ্যতা সাকিরা-নোরা ফতেহিদের হাত ধরে শিল্প বলে চালাবার চেষ্টা করলেও সেটা আদৌ যৌন সুড়সুড়ি ছাড়া আর কিছুই নয় এবং তা কোন ধরণের শিক্ষাঙ্গনেই পরিবেশন করবার উপযুক্ত নয়। বাংলার যে কোন সুস্থ ও প্রগতিশীল চিন্তার মানুষজনেরাই আমাদের সাথে সহমত হবেন বলেই আশা রাখি।
যাইহোক, যা বলছিলাম আর কি, ভৈরব গাঙ্গুলী কলেজের ফেস্টে যখন ভাড়া করা ‘বেলি ডান্সার’ এলো, তখন এরপর মদ আসবে না তা কি হয়! দেখা গেলো কলেজের প্রবল প্রতাপশালী তৃণমূল ছাত্রনেতাকে, যিনি ঐ কলেজ থেকে দশ বছর আগেই পাশ করে বেরিয়ে গেছেন, মাথায় মদের গ্লাস নিয়ে বেলি ডান্সারের সাথে জনপ্রিয় ‘জামাল কুদু’ গানের সাথে তাল মিলিয়ে নাচছেন। প্রসঙ্গতঃ জানিয়ে রাখি, ঐ ছাত্রনেতার নাম রানা বিশ্বাস এবং ওর মা কামারহাটি পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর। বাংলার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে এতটা কদর্য ও নিচে নামতে পারে তা আমার জানা ছিল না, জানলাম। এরপর কোনদিন শুনবো ‘ফেস্ট’ উপলক্ষে কলেজ প্রাঙ্গনেই যৌনকর্মী ভাড়া করে এনে কলেজের ক্লাসরুম গুলোতে অবাধ যৌনাচার চলছে। হ্যাঁ, এমন কথা শুনতেও আমাদেরকে এবার নিজেদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখতে হচ্ছে। কারণ শুনলাম কলেজের গভর্নিং বর্ডির চেয়ারম্যান তথা কামারহাটি পুরসভার তৃণমুলী প্রধান গোপাল সাহা এই ব্যাপারটাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চান না। ইনফ্যাক্ট তিনি এরমধ্যে ভুল কিছুই দেখছেন না। উনি জানিয়েছেন ‘কলেজ ফাংশনে এই রকম একটু নাচ-গান হয়েই থাকে, এরকম নাচ গানে ছেলেমেয়েরা মজা পায়’। অর্থ্যাৎ কলেজ কর্তৃপক্ষের জ্ঞাতসারেই কলেজ প্রাঙ্গনে বেলি ডান্সার নাচলো। মানে মোচ্ছবের পূর্ণ মদত যে রয়েছে উপরের মহল থেকে তা স্পষ্ট করে জানা গেলো।
তাই সব দেখেশুনে আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি, ‘তৃণমূল যুবা’ না কি একটা আছে যেন, যাদের নেতা সেই সর্বজনবিদিত লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস কোম্পানির ‘জনৈক’ কর্ণধার সেই তারা আদৌ কোন ‘মা-মাটি-মানুষ’এর দল নয়, এরা ‘মদ-মাংস-মেয়েছেলে’ নিয়ে ফুর্তি মারা একটা গ্যাং। এরা যে শারীরিক সম্ভোগের বিনিময়ে ‘মনোজিৎ মিশ্র’ কায়দায় ছাত্রীদেরকে কলেজের স্টুডেন্ট ইউনিয়নে পদ বিলোবেন এবং কাঙ্খিত সহযোগিতা না পেলে কলেজ ক্যাম্পাসেই সহপাঠী মেয়েদেরকে ধর্ষণ করবেন এটাই স্বাভাবিক। এসবের সামনে মেয়েদের দিয়ে কেলেজের মধ্যে মাথা টেপানো বা গা-হাত-পা ‘ম্যাসাজ’ তো তুচ্ছ ব্যাপার। এরমধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা নেই। আর এটা বোঝবার জন্য কোন আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্সেরও দরকার পড়ে না।
সেই কবে তৃনমূলী তাপস পাল বলেছিলেন ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব, যা-তা করে দিয়ে চলে যাবে, রেপ করে দিয়ে চলে যাবে….!’ আর আপনি ভাবলেন ওটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ওষুধের ওভারডোজ। কেষ্ট নয়, আপনার মাথায় অক্সিজেন কম যায় মশাই। আপাতত যে কলেজে আপনার মেয়ে পড়ে, সেখানে তৃণমূল ছেলে ঢুকিয়েছে। এরপরও আপানারা সতর্ক না হলে আপনার বাড়ির বেডরুমে তৃণমূলের ছেলে ঢুকবে।
কাজেই এদের থেকে সাবধান। এরা আদৌ কোন লেসার এভিল নয়। এরা হলো লুম্পেন। এরা বাংলা ও বাঙ্গালীর শত্রু। এদের থেকে দূরে থাকুন। আর এদের হয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে বুদ্ধিজীবী বা অরাজনৈতিক সেজে যারা হাওয়া তোলবার চেষ্টা করছেন তাদেরকে ঘৃণা করুন।
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
Comments are closed.